ছায়াবীথি তলে এসো, পর্ব-৭, ইস্তিয়াক আহাম্মেদ
পর্ব-৭
আমার চাকরী হয়েছে কথাটা আগে কাকে জানানো দরকার? অনেক দিন বাসায় কিছু নেওয়া হয় না । বাসায় কিছু খাবার নিয়ে যাই।
কাটাবনের রাস্তা দিয়ে আমি প্রায়ই হেঁটে যাই। আজকেও হাটছিলাম সারি সারি দোকানে বিভিন্ন প্রজাতির পশু পাখি খাচার মধ্যে ,এ গুলো অনেক দামে বিক্রি হয়। রং বেরং এর নানা বিদেশী পাখি, কুকুর। কিছু কুকুর সারাক্ষণ জিভ বের করে রাখে। দেখতে দেখতে অনেকটা সময় কেটে যায়।
আমার সময়ের কোন অভাব নেই । আজকে হয়তো আমার জীবনে বড় একটা বাক নিয়েছে। কেন জানি বেকার জীবনটার জন্য হালকা পাতলা একটা মায়া জন্মে গেছে। আর হয়তো বা এমন করে হেঁটে হেঁটে নীলক্ষেত, শাহবাগ, বাংলাবাজার এই সব এলাকাতে যাওয়া হবে না। আর হয়তো বা অকারণে রিয়া'র বাসায় গিয়ে বসে থাকা হবে না।
শাহবাগের মোড়ে ফুলের দোকানে নানা ফুল। কয়েকটা গোলাপ কিনে নিলাম আর কিছু মিষ্টি নিয়ে বাসার দিকে রওনা হলাম।
কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে।
চাচী দরজা খুললো। চাচীর হাতে মিষ্টির প্যাকেট দিলাম ।
কি এগুলো? আর হাতে ফুল? কি জন্যে?
চাচী আমার চাকরী হয়েছে।
চাচীর মুখটা খুশিতে আনন্দে ভরে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যে বাসার সবাই আমার রুমে এসে গোল হয়ে বসলো।
অমিত জিজ্ঞেস করলো , ভাইয়া কি চাকরী?
বিদেশী কাস্টমারদের সাথে কাজ, দেশীয় বিভিন্ন প্রোডাক্ট এক্সপোর্ট। ম্যানেজার, সিলেটে।
বাবা জিজ্ঞেস করলেন , বেতন কত?
বললাম, ৩০ হাজার টাকা।
কম টাকা, তারপরেও খারাপ না। জয়েন কবে?
আগামী সপ্তাহে।
চাচী কে বললাম চাচী আমি অমিত আর বাবাকে নিয়ে যাবো ।
চাচী চুপ করে রইলেন । বাবার দিকে তাকালাম বাবার চোখ খুশিতে আনন্দে চকচক করছে।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে চাচী বললেন, শুভ তুমি চাকরী পেয়েছে আমি খুব খুশি হয়েছি। আমি জানি নানা কারণে তুমি আমার উপর রেগে থাকতে পারো। নতুন চাকরী হয়েছে অমিত আর দাদাকে এখন নিয়ে যাওয়ার কোন দরকার নেই।
আমি বাবার দিকে তাকালাম।
বাবা বললো, রেশমা যখন চাইছে না তখন থাক। তাছাড়া অমিতের পড়ালেখা, ট্রান্সফার হওয়ার ব্যাপার আছে। প্রথমে তুমি যাও পরে না হয় আমরা সবাই গিয়ে ঘুরে আসবো।
চাচী বললেন, তোমার থাকা খাওয়ার কি ব্যবস্থা?
বাসা ঠিক করে রাখবে বলেছে, রান্নার জন্য হয়তো লোক রাখতে হবে, অথবা বাইরে থেকে খেয়ে নিলেই হবে।
আমি বাবার দিকে তাকালাম , আমি জানি বাবার মাথায় এখন আমার বিয়ের পরিকল্পনা ঘুরছে।
অমিত বললো ,ভাইয়া আমি সাথে কিছুদিনের জন্য যাবো। খুব ঘুরতে ইচ্ছে করছে ।
তোর কলেজে সমস্যা হবে না?
কয়েকদিন ক্লাস না করলে কিছু হবে না।
নীতু বললো আমি ও যাবো।
বাবা বললো , আমি একটা কথা বলি সবাই মিলে কয়েকদিনের জন্য ঘুরে আসি। কতদিন কোথাও যাওয়া হয় না। মতিন আসুক মতিনের সাথে কথা বলে ঠিক করবো। অফিসে ম্যানেজ করতে পারে কিনা, কে জানে?
চাচী বললো আপনি চিন্তা করবেন না দাদা, মতিন তো বলতে গেলেই অফিস থেকে ছুটিই নেয় না। ছুটি চাইলে অবশ্যই পাবে।
বাসার সবাই খুশি, এই প্রথম মনে আনন্দ নিয়ে ঘুমাতে গেলাম । মিতার বাবার কিছু কিছু কথা মনের মাঝে খচখচ করে বিধছে। লোকটিকে বুঝতে পারা এত সহজ নয়। মিতা ভাল থাকুক, খুব ভাল থাকুক।
জগৎ এ সবাই ভাল থাকুক। রিয়া তার সহজ সরল সাইফুল সাহেবের সাথে ভাল থাকুক । মতিন চাচা এসেছে শব্দ পেলাম ,আজ অনেক রাত করে এসেছে হয়তো অফিসে কাজ ছিলো। নীতু শব্দ করে পরছে। মেঘ ডাকছে হয়তো বৃষ্টি হবে।
স্বপ্ন দেখলাম রিয়াকে নিয়ে, রিয়া যেই স্বপ্নটার কথা বলেছিলো সেই স্বপ্নটাই। স্বপ্নের এক পর্যায়ে ঢেউ আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেলো, রিয়া চিৎকার করছে। ঘুম ভেঙ্গে গেলো। পাশের বাসায় কেউ একজন কাঁদছে । মানুষের কত কষ্ট, মাঝ রাতে কষ্ট গুলো বলে উঠে সময় হয়েছে আমাকে মনে কর।
আমার সারা শরীরে ঘাম একেবারে ভিজে গেছি। এই স্বপ্নের কি ব্যাখ্যা? হয়তো বাবা বলতে পারবে, বাবাতো স্বপ্ন বিশারদ।
সিলেট যাওয়ার আগে আমার একবার রিয়ার সাথে দেখা করতে হবে , কিছু কথা বলতে হবে। কি বলবো জানিনা । ঝুম বৃষ্টিতে আমার হাত ধরে ভিজতে না দেওয়ার জন্য ক্ষমা চাইবো।
সাইফুল সাহেবকে আমি দেখিনি, খুব ইচ্ছে করছে লোকটাকে গিয়ে বলি , সাইফুল সাহেব এই রিয়া মেয়েটিকে আমি ভালবাসি ,আমি তার হাত ধরে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে চাই ,আপনি কি আমাকে সেই সুযোগ দিবেন?
সাইফুল সাহেব এই সুযোগ দিবেন না, কেউ তার প্রিয় মানুষকে হারাতে চায় না।
মায়ার জগৎ, মায়ার চক্র, এই মায়ার কাছে আমি আমরা সবাই খুব অসহায়।
রিয়ার জন্য মায়া লাগছে খুব বেশি, আমি মায়াকে পাশ কাটাতে পারছি না, কেউ পারেনা।
আমাকে কেউ একজন ডাকছে অনেক দূর থেকে, আমি উত্তর দিতে পারছি না। কার যেন চেনা সুর । সুর করে গাইছে “ছায়াবীথি তলে এসো” ,কে গাইছে মিতা নাকি রিয়া? নাকি অন্য কেউ? নাকি মায়া ?
ঘুম ভাঙ্গলো দেরি করে, আজ কে টিউশানী নেই । মিতাদের বাসায় আর যেতে হবে না। একটা চক্র হতে বেরিয়ে এসেছি। পৃথিবীর নিয়ম হলো মানুষ বৃত্তের চক্রে বন্দি থাকবে। আরো চক্র ভাঙ্গতে হবে। আজ অন্য কোথাও যাবো।
সুন্দর!
ReplyDeletethanks
Deletenice story
ReplyDelete