ছায়াবীথি তলে এসো, উপন্যাস, পর্ব-৬, ইস্তিয়াক আহাম্মেদ
ছায়াবীথি তলে এসো
ইস্তিয়াক আহাম্মেদ
পর্ব-৬
রিয়া এসেছে বাসায় নীতুর সাথে গল্প করছিলো ।
কি ব্যাপার রিয়া হঠাৎ করেই বাসায় চলে আসলি?
তুই আমার বাসায় যেতে পারিস আমি যেতে পারি না। আসলে তোদের দেখতে আসলাম। ইচ্ছে ছিলো তোর বাগানে বসে মধ্যবিত্তের দীর্ঘশ্বাস ফেলবো। কিন্তু দীর্ঘশ্বাস দিতে পারছি না, আনন্দ পাচ্ছি।
ভাল।
শোন সাইফুল ইসলাম মানে আমার হবু বর আমার সাথে আসতে চাচ্ছিলো অনেক কষ্টে রেখে এসেছি, সে এখন ফুটপাতের দোকানে বসে ক্রিম রুটি আর চা ভিজিয়ে খাচ্ছে।
কি বলিস?
হু, আজব মানুষ, সব কিছুতেই আনন্দ পায়।
নিয়ে আসতি।
ফোন দিলে চলে আসবে, দিবো?
রিয়ার কাজল কালো চোখের চাহনি আমার প্রতি। বাকানো ভ্রুর নীচে অদ্ভুত দুটি চোখে আমার প্রতি তীব্র অভিযোগ। এই চোখে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে নেই, মায়ার বৃত্তে বন্দি হয়ে যাবো। মায়াকে প্রশ্রয় দিলে চলবে না ।
চারিদিকে আধার করে মুষল ধারে বৃষ্টি শুরু হলো।
জানিস আমি জানতাম আজ বৃষ্টি হবে , আমার অনেক দিনের একটা ইচ্ছে আছে তুই পুরণ করবি। আমি তোদের ছাদে গিয়ে তোর হাত ধরে একটু ভিজতে চাই , দিবি আমাকে এই সুযোগটুকু। রিয়ার চোখেমুখে করুণ আর্তি।
সাইফুল সাহেব রাস্তায় ভিজছেন, তোর উচিৎ সাইফুল সাহেবের হাত ধরে রাস্তায় ভেজা।
নীতু চা বিস্কেট নিয়ে এসেছে। চাচী কিছুক্ষণ পরপর এসে রিয়াকে উকি মেরে দেখে যাচ্ছে। রিয়ার চোখে বিষন্নতা ভর করেছে। খুব সুন্দর লাগছে ওকে দেখতে, খুব ইচ্ছে করছে রিয়াকে নিয়ে ছাদে চলে যাই ওর হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজি। আমি মায়াকে পাশ কাটাতে পারছি না, মনে হচ্ছে নিজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি নিজেকে ঠকাচ্ছি।
আচ্ছা রিয়ার আবদার টা খুব বেশি না, আমার হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজবে এতটুকু তো ওর জন্য করতেই পারি ।
সাইফুল সাহেব রিয়াকে ফোন দিয়েছেন , ও কথা বলছে। সাইফুল সাহেব খুব জোড়ে জোড়ে কথা বলছেন বাইরেও সাউন্ড চলে আসছে।
কথা শেষ হতেই রিয়া বললো, আমি চলে যাচ্ছি সাইফুল বৃষ্টিতে ভিজে দাঁড়িয়ে আছে , আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
.........
স্যার আপনার চাকরী হয়ে গেছে, মিতা বললো।
কি বলো, কিভাবে?
বাবার এক বন্ধু আছে সিলেটে ,উনিই দিয়েছেন। স্যার এই নেন আপনার এপয়্যানমেন্ট লেটার । বাবা আপনার সাথে কথা বলবে।
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ মিতা।
আপনার জন্য কিছু করি নাই স্যার নিজের জন্যে করেছি । একদিন বলেছিলাম আপনি ফেরেশতার মতো নাকি ভন্ডামি করেন? আপনি আসলেই অনেক ভাল । আমার এই ছোট জীবনে অনেক ছেলে দেখেছি অনেক পরিস্থিতির সামনে পরেছি তাই বলছি স্যার আপনি খুব ভাল। মিতার চোখে পানি। মিতা ভেতরে চলে গেলো।
কিছুক্ষণ পর মিতার বাবা ঢুকলেন। কি অবস্থা ইয়াং ম্যান?
এই তো ভাল।
কংগ্রাচুলেশান!
ধন্যবাদ ।
ধন্যবাদ আমাকে না মিতাকে দাও। আর শোনো মোতালেব আমার বন্ধু মানুষ ওরা বাইরের বায়ারদের সাথে কাজ করে । তোমার মতো একজন দরকার ছিলো ওদের। শুরুতেই ৩০ হাজার দিবে বলেছে। ভাল করলে পরে বেতন বাড়বে । চলবে না?
জি, খুব ভাল চলবে। ধন্যবাদ আংকেল।
আমি কিছু কথা বলবো মনোযোগ দিয়ে শুনবে।
কি কথা?
মিতা যে তোমাকে পছন্দ করে এ বিষয়ে তুমি কিছু জানো?
না।
তুমি কি ওকে পছন্দ করো?
না, আংকেল। কখনো এমন ভাবী নাই।
ও যখন কথা বলে, তোমাকে নিয়ে ঘন্টার পর ঘণ্টা কথা বলে। তোমার প্রত্যেকটি কথা, অভ্যেস ,আচরণ ও নকল করে ।
আমি চুপ করে রইলাম।
ও এক ঘোরের মধ্যে আছে। যেহেতু তুমি ওকে নিয়ে ভাবছো না তাই তোমার দূরে চলে যাওয়াই ভালো। তোমার চাকরীটা হওয়াতে ভালোই হয়েছে , তাই না ।
আংকেল, এ জন্যই কি আপনি আমাকে চাকরী দিয়েছেন?
মিতার বাবা চুপ করে রইলেন।
আপনি তো আমাকে টিউশানী থেকে বাদ দিতে পারতেন।
মিতা খুব বুদ্ধিমান মেয়ে ও তোমাকে খুজে বের করতো। এই যে আমি তোমাকে চাকরী দিয়েছি ও
জানে এই চাকরীটা তোমার খুব দরকার , তোমার ক্ষতি হয় এমন কাজ ও করবে না। আমি জানি তুমি ভদ্র ভালো ছেলে, মিতা আমাকে বলেছে ওকে আমি বিশ্বাস করি।
আংকেল আমি যাই , ভালো থাকবেন আর দোয়া করবেন আমার জন্য।
নিয়োগপত্র নিয়ে বের হয়ে আসলাম । মিতার জন্য কষ্ট হচ্ছে । ওর বাবা চলে এসেছে হয়তো ও নিজেকে সামলে নিতে পারবে। বাবা তার মেয়েকে কষ্টে থাকতে দিবেন না।
হ্যা, মিতার বাবা ভয়ংকর বুদ্ধি রাখেন, প্রত্যেকটা কাজের পিছনে তার লজিক থাকে । তিনি তার মেয়ের সাথে একটি অলিখিত চুক্তি করেছেন আর সেই চুক্তিটা হলো আমার চাকরী।
.........চলবে
খুব সুন্দর হয়েছে
ReplyDeleteভাল হয়েছে
ReplyDeletethanks
DeleteVery goot story
ReplyDeleteThanks.
Delete