ছায়াবীথি তলে এসো, উপন্যাস, পর্ব-১, ইস্তিয়াক আহাম্মেদ

 

ছায়াবীথি তলে এসো

 ইস্তিয়াক আহাম্মেদ

 পর্ব-০১

ছোট চাচীর চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙল রাত টা ৩০ মিনিট যখন মাঝ রাতে কোন বাড়িতে চেঁচামেচি হয় ধরে নিতে হবে মারাত্নাক কোন সমস্যা হয়েছে। মাঝ রাতের সব কিছুই অশুভ। মাঝ রাতে কেউ ফোন করলে নিশ্চিত ধরে নিতে হবে কারো মৃত্যু হয়েছে বা কারো হার্ট অ্যাটাক হয়েছে আবার মাঝ রাতে কারো সাথে ঝগড়া লাগলে সেটাও ভয়ংকর হয় মাঝ রাতের ভালবাসাও ভয়ংকর হয় অনেকে আবার মাঝরাতে একাকী মৃত্যু চিন্তা করেন এই রাত ব্যাপারটাই যেন কেমন , রহস্য ঘেরা তবে আমাদের বাসায় যখন মাঝ রাতে খুব চেঁচামেচি হয় ধরে নিতে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার বাবা তো প্রায়ই মাঝ রাতে স্বপ্নে দেখে চিৎকার দিয়ে লংকা কান্ড বাধিয়ে ফেলেন বাবা তার সব স্বপ্নের একটাই মানে বের করেন তার মৃত্যু হবে বাবার কাছে একটা বই আছে স্বপ্নের অর্থ ।বাবা স্বপ্ন বিশারদ তবে সমস্যা হলো বাবা সব স্বপ্নের মানে ভয়ংকর কিছু বের করেন একবার স্বপ্নে দেখলেন তিনি নৌকায় চরে কোথায় যেন যাচ্ছেন, তিনি স্বপ্নের অর্থ বের করলেন তার মৃত্যু হবে। আরেকবার ভোর রাতে স্বপ্নে দেখলেন তার বাবা তাকে নিতে এসেছেন, এটাও নাকি মৃত্যু? ভোর রাতের স্বপ্ন নাকি কখনই মিথ্যা হয় না বাবা প্রতিদিনই এমন স্বপ্ন দেখেন এবং চিৎকার দিয়ে উঠেন।

এমন চেঁচামেচিতে ঘুম আসা যায় না ড্রইং রুমে গিয়ে দেখা দরকার ব্যাপারটা কি ?

নীতু ডাকছে , ভাইয়া দরজা খোলো

কেন , কি হয়েছে ?

বের হয়ে এসো , দেখে যাও

নীতু আমার চাচাতো বোন, ছোট চাচার মেয়ে এবার দশম শ্রেণিতে পড়ে দেখতে খুব রূপবতী ছাত্রী দূর্দান্ত সব সময়ই রোল থাকে

জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে বল ?

নীতু বললো আম্মুর ঘরে চলো

চাচা চাচী দুজনে বেশ দূরে দূজনার দিকে অগ্নি নয়নে তাকিয়ে আছেন চাচা রাগে ফোসফোস করছেন আমার চাচা আব্দুল মতিন প্রাইমারী স্কুলের মাস্টার সাদাসিধে মানুষ ১৭ বছর ধরে স্কুলে চাকরি করছেন আমার বাবার ঠিক বিপরীত ধরণের মানুষ তিনি। তার একটি মাত্র সন্তান নীতু। আমি চাচাকে এমন ভাবে রাগতে কখনো দেখিনি।

চাচা বললো , শুভ তুই সাক্ষী তোর সামনে এই জানোয়ারটাকে আমি তালাক দেবো

চাচী চিৎকার করে কাদছেন

এই পেত্নির বাচ্চা কাদবি না , ছোট চাচার মেজাজ অত্যাধিক গরম।

নীতুকে ধমক দিলেন , সঙয়ের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন ? তোর আম্মুর সূটকেস গোছা , আজকেই বিদায়

নীতু খুব স্বাভাবিক ভাবে সূটকেস গোছানো শুরু করলো

ঘটনা যে খুব গুরুতর বুঝতে পারছি সামান্য ঘটনায় ছোট চাচার এত রাগ করার কথা নয় কিছু একটা করা দরকার বুঝতে পারছি না ঘটনা টা কি জানতে হবে বাবা দড়জায় এসে দাড়িয়েছেন ?

কি হয়েছে মতিন ? গম্ভীর কন্ঠে বাবা জিজ্ঞেস করলো।

না দাদা কিছু হয় নাই। হঠাৎ করেই ছোট চাচার রাগ পানি হয়ে গেলো

তাহলে রেশমা কাদছে কেন?

ছোট চাচা চুপ করে রইলেন ছোট বেলা থেকেই কখনই চাচা কে বাবার সামনে মাথা উচু করে কথা বলতে দেখিনি

চাচী কাদতে কাদতে কাহিনী খুলে বললেন , ঘটনা টি স্বপ্ন নিয়ে প্রায় রতেই চাচী নাকি স্বপ্নে দেখেন ছোট চাচা আরেকটা বিয়ে করেছে তাই চাচী স্বপ্নের কথা বলার জন্য চাচাকে ঘুম থেকে জাগান আর এতেই নাকি চাচা খেপে যান

তবে চাচার ভাষ্য অন্যরকম , চাচী চাচার মোবাইল থেকে সমস্ত মেয়েদের নম্বর গুলো নিজের মোবাইল সেভ করে রেখেছেন এবং প্রায়ই সেই সব মেয়েদের কল দিয়ে ডির্স্টাব করেন আর বিভিন্ন কথা জিজ্ঞেস করেন। চাচার সাথে তাদের কি সম্পর্ক এসব জিজ্ঞেস করেন। আর প্রতি রাতেই ঘুমে ডির্স্টাব করেন চাচী স্বপ্নে দেখে চাচাকে জাগিয়ে তোলেন।

বাবা চুপচাপ সব শুনলেন তারপর গম্ভীর কন্ঠে বললেন ‘’এখন অনেক রাত ঘুমাও সবাই‘’

আমি আমার রুমে চলে এলাম ঘরিতে টা ৩০ বাজে এখন আর ঘুম আসবে না মাথাটা ব্যাথা করছে আমাদের একতলা বাসা রংচং উঠা সাদা রঙয়ের ছোট চাচা আর আমরা থাকি এখানে , বড় চাচা থাকেন আমেরিকায় বড় চাচাই বাড়ীটি তৈরি করেছিলেন ।চাচীর কাছ থেকে শুনেছি বাড়ীটি বড় চাচার নামে বাবা বেকার কোন কাজ করেন না এখন, একটা সময় ইসলাম পুরে বাবার কাপড়ের দোকান ছিল কিন্তু বাবা সে দোকানটি রাখতে পারেন নি , বেচে দিয়েছেন আমার নানা বাবাকে দোকানটি কিনে দিয়েছিলেন মা অনেক আগেই মারা গিয়েছেন , মার স্মৃতি খুব ঝাপসা আমদের দুই ভাই কে পৃথিবীতে রেখে গেছেন বাবা মাকে কোন সুখ দিতে পারেনি মা কে সংগ্রাম করতে হয়েছে দারিদ্রতার সাথে আমাদের এই সংসারে উপার্জন করেন আমার ছোট চাচা আমি পদার্থ বিজ্ঞানে মাস্টার্স করে চাকরি খুজছি আর একটা টিউশানী করি বাবার সাথে বড় চাচার সম্পত্তি নিয়ে ঝগড়া হওয়ার পর তার সাথে আমাদের আর কোন যোগাযোগ নেই আমি , অমিত আর বাবা এখন আমরা ছোট চাচার দয়ায় চলি। বুক চিড়ে বড় এক দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো

ঘুম আসছে না ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়া যাবে না তাহলে সকালে টিউশানীতে যাওয়া যাবে না শেষ রাতের দিকে ঘুম আসলো স্বপ্নে দেখলাম আমি যুদ্ধ করছি বন্দুক হাতে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে হঠাৎ করেই হানাদার বাহিনী আমাকে ঘিরে ফেললো আমি অপেক্ষায় আছি কখন আমকে গুলি করে মারবে। আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে বিদ্রুপ এর হাসি কিন্তু গুলি করছে না

আমার ঘুম ভাঙলো ঠিক সকাল টায় টায় আমাকে টিউশানীতে যেতে হবে ধানমন্ডিতে মিতাদের বাসায়

 

চলবে

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

ছায়াবীথি তলে এসো, উপন্যাস, পর্ব-৩, ইস্তিয়াক আহাম্মেদ

ছায়াবীথি তলে এসো, উপন্যাস, পর্ব-৬, ইস্তিয়াক আহাম্মেদ

ছায়াবীথি তলে এসো, উপন্যাস, পর্ব-৫, ইস্তিয়াক আহাম্মেদ