ছায়াবীথি তলে এসো, উপন্যাস, পর্ব-২, ইস্তিয়াক আহাম্মেদ
ছায়াবীথি তলে এসো,
ইস্তিয়াক আহাম্মেদ
পর্ব-০২
মিতা পরে অনার্স ২য় বর্ষে পদার্থ বিজ্ঞানে। যতক্ষণ মিতাকে পরাই মিতার আম্মু একটি চেয়ার নিয়ে পাশে বসে থাকেন। আমার জন্য ব্যপারটা বেশ অপমানজনক ও অস্বস্তিকর । কয়েকবার ভেবেছি টিউশানিটা ছেড়ে দিবো, কিন্তু মাস শেষে ৮ হাজার টাকা পাই যেটা একমাত্র রোজগার। মাসের শেষে ৮ হাজার টাকা হাতে পাওয়ার লোভে ছাড়তে পারিনি। মিতার কথাবার্তাও কেমন যেন অসংলগ্ন, মাঝে মাঝে অপ্রস্তুত হয়ে যাই। একবার আমাকে বললো জানেন স্যার আগের স্যার কে কেন বাদ দিয়েছি?
জিজ্ঞেস করলাম, কেন?
বদমাইশটার অভ্যেস খারাপ ছিল, টেবিলের নিচ দিয়ে আমার পায়ের সাথে পা ঘষাঘষি করতো। একদিন হাইহিল পড়ে এমন পাড়া দিয়েছিলাম রক্ত বের হয়ে গিয়েছিলো।
আমি বললাম, থাক আর বলতে হবে না।
স্যার, ওর চোখ ও খারাপ ছিলো।
মিতাকে থামিয়ে দিইয়েছিলাম।
আজকে দরজা খুললো মিতার মা। বললেন, মিতা তো আজ বাসায় নেই। ভাবছিলাম তোমাকে ফোন করে আসতে না করবো। কিন্তু তোমার সাথে আমার কিছু জরুরী কথা আছে।
মনে মনে বেশ ভয় পেয়ে গেলাম, কি জানি মিতা আমার নামে কোন উল্টাপাল্টা কথা ওর মায়ের কাছে বলেছে কিনা!
জিজ্ঞেস করলাম, কি কথা আন্টি?
মিতাকে নিয়ে।
কি হয়েছে মিতার
এক বদমাইশের খপ্পরে পড়েছে মেয়েটা আমার । এক নেশাখোর ছেলের সাথে ওর সম্পর্ক। আমি গতকাল ওর ঘর গুছানোর সময় একটা চিঠি আর কয়েকটি নেশার ট্যাবলেট পাই। পড়ে শুনি সেগুলো ইয়াবা! খোজ নিয়ে জেনেছি ছেলেটার নাম আমজাদ, গুন্ডা, মাস্তান টাইপের ছেলে। আমার মেয়েটাকে পারলে তুমি বাচাও বাবা।
আমি কি করবো আন্টি?
আমি জানিনা বাবা, কিন্তু কিছু একটা করো। আমার আর কেউ নেই ওকে বোঝানোর মতো।
আমি চুপ করে রইলাম।
আরেকটা কথা বাবা, আমি পড়ার সময় তোমাদের সামনে বসে থাকি তোমার জন্য নয়, মেয়েটার জন্য। মেয়েটা বাবার মতো বদমাইশ হয়েছে।
ওর বাবা কোথায়?
আমেরিকায়, আমার সাথে যোগাযোগ নেই । তবে মিতার সাথে যোগাযোগ আছে, মেয়ের সব খরচ ওর বাবাই দেয়।
আমি হালকা নাস্তা করে বের হয়ে আসলাম।
আমার কিছু টাকা দরকার , টিউশানির টাকা পেতে আরো কয়েকপদিন লাগবে। আমার ছোট ভাই অমিত আবার এইচ এস সি তে এ প্লাস পেয়েছে, ওকে একটা মোবাইল গিফট করবো কথা দিয়েছিলাম।
রিয়ার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। মস্ত রাজপ্রসাদের মতো বাসা । ভেতরে ঢুকবো কিনা ভাবছি । রিয়া আমার সাথেই পড়াশুনা করেছে। আমার জীবনে যতবার টাকার প্রয়োজন হয়েছে ওর কাছ থেকেই নিয়েছি। ধারের টাকা কখনো শোধ করা হয়নি। যতবার দিতে গিয়েছি বলেছে চাকরী পেলে একবারে দিস।
ওদের বাসার কাজের বুয়া দরজা খুলে দিল, আমাকে চিনে, রিয়াকে খবর দিতে ভেতরে ঢুকে গেল।
রিয়া হাসিমুখে পাশে এসে বসলো।
আমি মাথা নীচু করে বসে আছি।
কিরে, টাকা লাগবে?
হু, অমিতকে একটা ফোন কিনে দিবো বলেছিলাম। ৫ হাজার টাকা দে, আমি টিঊশানির টাকা পেলেই দিয়ে দেবো।
সেটা চিন্তা করতে হবে না, আমি এনে দিচ্ছি। শুভ শোন আমার সামনে তুই মাথা নীচু করে বসে থাকবি না, তোর মেরুদন্ড বাকা হয়ে যাচ্ছে। তোর মুখের হাসিটাও দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে।
হাসলাম, মধ্যবিত্তের কষ্ট তুই বুঝবি না?
আমি একটু মধ্যবিত্তের কষ্ট বুঝতে চাই, সাহায্য করবি?
কিভাবে?
আমাকে বিয়ে কর, তোদের বাসায় নিয়ে যা, আমিও একটু তোদের কষ্ট অনুভব করি। তোর মতো সিরিয়াস ফেস নিয়ে বারান্দায় বসে থাকবো আর কিছুক্ষণ পর পর দীর্ঘশ্বাস ছাড়বো। মধ্যবিত্তের দীর্ঘস্বাস।
চুপ করে রইলাম।
বাবা আমার জন্য ছেলে দেখেছেন। ছেলে আমেরিকায় থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, টাকার কুমীর।
ভাল তো। রিয়া আমি এখন যাই।
কই যাবি, চাকরী বাকরি নাই, একটু কথা বলি।
রিয়াদের বাসা থেকে চলে এলাম
--
আমি একটা বেঞ্চিতে বসে আছি। মিতাকে বলেছি এখানে আসতে। পার্ক একটা আজব জায়গা। ভাল করে খেয়াল না করলে বোঝা যায় না লোকজন আছে কিনা, চিপাচাপায় কলেজের পোলাপান খুসখুস করে কথা বলে। এখন দুপুর বেলা, বিকালে পরিবেশ পালটে যায়। সকালে আরেক রকম থাকে।
স্যার আপনি হঠাৎকরেই পার্কে আসার জন্য বললেন,ঘটনা কি? মিতা সামনে এসে দাড়ালো।
বসো তোমার সাথে কিছু কথা আছে।
কি কথা স্যার, একেবারে পার্কে! প্রেম নিবেদন করবেন নাকি স্যার?
আমজাদ টা সত্য করে বলো ? কোন কথা গোপন করবে না।
আমজাদ বলে এই পৃথিবীতে অনেক লোক আছে, তার মধ্যে আপনি কোন আমজাদ এর কথা জানতে চান স্যার?
যার সাথে তোমার একটা সম্পর্ক আছে।
স্যার আমজাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই, সম্পর্ক তো আপনার সাথে আছে।
মানে?
মানে হলো আপনি স্যার আমি ছাত্রী, স্যার শিক্ষক সম্পর্ক।
ফাজলামো বাদ দাও। যা জিজ্ঞেস করছি উত্তর দাও।
স্যার আপনাকে সব বলবো। তার আগে আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি এত জায়গা থাকতে পার্কে কেন ডাকলেন? অন্য কোথাও তো ডাকতে পারতেন? নাকি রূপবতী একটা মেয়ের পাশে পার্কে বসার ইচ্ছা বা সুযোগ হাতছাড়া করতে পারেন নি? উত্তর দিতে হবে না স্যার , ২০ টাকার বাদাম কিনেন দুজন মিলে খাই আমি খোসা ছাড়িয়ে দিবো আপনি খাবেন।
তারমানে আমার প্রশ্নের উত্তর তুমি দিবে না?
না স্যার, আপনি যেমন আমার প্রশ্নের উত্তর দিবেন না । আমিও আপনার প্রশ্নের উত্তর দিবো না।
ঠিক আছে আমি যাচ্ছি ।
স্যার পালাচ্ছেন? বসেন সব বলছি আপনাকে।
আম্মু নিশ্চয়ই আপনাকে সব বলেছে। স্যার আম্মুর সাথে আমি একটা খেলা খেলছি। এই খেলার নাম নেই। কবে কখন শেষ হবে তাও জানিনা। আমজাদ বলে কেউ নেই অন্তত আমার জীবনে ।ইচ্ছে করে ঘুটি সাজিয়েছি আমার বিরুদ্ধে আম্মুর কাছে। এমন ভাবে সাজিয়েছি যাতে আম্মু সত্য সত্য বিশ্বাস করে আমার সাথে অন্য কারো প্রেম আছে।
কেন কি লাভ তোমার এতে?
আমার লাভ না স্যার ,আপনার লাভ। আম্মু মনে করে আমি আপনার প্রেমে হাবুডুবো খাচ্ছি তাই আপনাকে আর টিউশানীতে রাখতে চাচ্ছেন না। আর আমি তাই আপনার উপর থেকে সন্দেহ সরানোর জন্যই আই মিথ্যাটা বলতে বাধ্য হয়েছি। আম্মু অকারনে আমাকে সন্দেহ করে, আপনি যখন পড়াতে আসেন আম্ম বসে থাকে। শুধু তাই নয় আম্মুর সব কিছু নিয়ে সন্দেহ, আমি যখন ক্লাস ফোরে পড়ি তখন থেকে সন্দেহ। এ সন্দেহের কারণেই আব্বু আম্মুকে ছেড়ে চলে যায়।
তোমার আম্মুর আমাকে সন্দেহের কারণ টা কি?
দোষ টা আমারই স্যার। কথায় কথায় আমি আপনার উদাহরণ দেই। আপনাকে নিয়ে আম্মার সাথে গল্প করি কথা বলি। আর আম্মু তাই ভেবে বসে আছেন আমি আপনাকে ভালোবাসি। শেষ দিকে মিতার গলাটা ধরে এলো, চোখ ছলছল করছে।
আম্মু কে বড়সড় একটা ধাক্কা দিবো। আগামী কয়েকদিন আমাকে পড়াতে আসবেন না। আম্মুর সাথে আমার খেলা মাত্র শুরু হয়েছে, আর কিছুদিন খেলতে দিন। যখন সময় হবে আমি আপনাকে ডাকবো পরতে । আর আপনার টাকা আপনি মাস শেষে পেয়ে যাবেন, টাকা নিয়ে চিন্তা করবেন না।
চুপ করে রইলাম, কিছু বলার নেই । আমার মতো মানুষের টাকা নিয়েই চিন্তা করতে হয়, বাকি সব কিছু বিলাসিতা। মিতা কখন যেন উঠে চলে গেছে । চারিদিকে প্রখর রোদ পুড়িয়ে দিচ্ছে আমায় । আমি মিতাকে কেন পার্কে ডাকলাম এই প্রশ্নের উত্তর কি?
আমি জানিনা, আমি বলতে পারছি না।
চলবে........
Excellent!!
ReplyDeletenice
ReplyDeletegood story
ReplyDelete