ছায়াবীথি তলে এসো, উপন্যাস, পর্ব-৫, ইস্তিয়াক আহাম্মেদ

 ছায়াবীথি তলে এসো

ইস্তিয়াক আহাম্মেদ 

পর্ব-৫

মিতার বাবা এসেছে আমেরিকা থেকে, সুদর্শন।  এক নজরেই ভাল লাগার মতো মানুষ।

সালাম দিতেই হ্যান্ডসেক করে আমার সাথে গল্প করতে বসে গেল।

মিতার পড়ালেখা কেমন চলছে  বলতো?

এই তো আংকেল ভালই।

মাথা বেশি ভাল না, আমার মতো। তাই বলে ভেবো না আমার বুদ্ধি কম। যারা পড়ালেখায় খারাপ তাদের বুদ্ধি বেশি যেই বুদ্ধি পড়ালেখায় কাজে লাগে না।

কোথায় লাগে?

বদমাশিতে, আমার সমস্ত বুদ্ধি খরচ করি বাজে কাজে।

আমি হাসলাম।

হেসো না, শুনো আমি যখন আমেরিকাতে যাই প্রথম একটা পিৎজার দোকানে চাকরী নেই।  মানুষগুলো এমনভাবে আমার দিকে তাকাতো যেন আমি একটা পোকা। তারপর সেই কাজটা করতাম।

কি কাজ আংকেল?

স্যাডিস্টদের মতো, থাক বাদ দাও, তোমার ভাল লাগবে না।

আমাকে কৌতূহলে পেয়ে বসেছে,  বললাম আংকেল বলেন।

যখন আমার সর্দি লাগতো সেই সমস্ত নাকের জিনিষ পিৎজাতে মাখাতাম, তারপর সার্ভ করতাম।

শুনেই আমার গা গুলিয়ে উঠলো, বমি আসি আসি করছে।

আমি যে একটা স্যাডিস্টশ আরো কিছু কাজে প্রমাণ পেলাম।

কি কাজ ভয়ে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে না। চুপ করে রইলাম।

মিতার বাবা বলতে লাগলো, বাথরুমে ঢুকে খুব ইচ্ছেমত বকাবকি করি। কাউকে উদ্দেশ্য করে নয়। বকা দিয়ে খুব মজা পেতাম, শান্তি পেতাম। কিছু বকা শুনতে চাও?

না আংকেল থাক।

থাক, আসলেই শোনার যোগ্য নয়। প্রথম দেখায় অনেক কথা বলছি,  কিছু মনে করো নাই তো?

না আংকেল।

আরো একটা কথা বলি, মিতার মা একজন সিজোৎফ্রেনিয়া রুগি, উনি সব কিছুতেই সন্দেহ করেন। 

আর ঠিক এ কারণেই আমি দূরে চলে গেছি। অবশ্য বাংলাদেশের বেশিরভাগ মহিলাই সিজোৎফ্রেনিয়া রুগি, এটা আমার আইডিয়া।

কেন এমন মনে হয় আংকেল?

বেশির ভাগ মহিলাই বিয়ের পর কষ্ট পায়, সারাদিন কাজ করে, অবহেলা পায়, ঘৃণা পায়, এই চরম অবহেলা ঘৃণায় তাদেরকে মানুসিক ভাবে শেষ করে দেয়। 

নিজের মায়ের কথা মনে পরলো। অবহেলা, ঘৃণা আমার মাকে শেষ করে দিয়েছে।

তুমি কি জানো বেশিরভাগ স্যাডিস্ট মানুষ খুব গুছিয়ে কথা বলে, লিখে, কাজ করে। তাদের কাজকর্মে তুমি বুঝতেই পারবে না। দেখবে ফেসবুকে নীতি কথা বলা মানুষ তাদের বাসার কাজের মেয়েকে অত্যাচার করে, রেপ করে, দূর্নীতি করে, ভাল কোন কিছুর সাথেই তারা জড়িত না। অথচ তাদের ফেসবুক দেখলে মনে হবে তারা ফেরেশতার মতো। শহরে ৭ দিনের বাসি পচা রুটিকে মরা মুরগি দিয়ে বড় বড় হোটেলগুলি যেমন সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে বার্গার নামে সার্ভ করে, মানুষগুলোর তেমন সবার ভেতরটা পচে গেছে, আছে সুন্দর কিছু আবরণ।  

অনেক কথাই বললাম তুমি কিছু মনে করো না।

না আংকেল, আপনার মতো করে ভাবার সুযোগ হয়নি।

তুমি কোন বিষয়ে পড়ালেখা করেছো?

পদার্থ বিজ্ঞান।

হু, ভাল সাবজেক্ট,  চাকরী পাও না?

চেষ্টা করছি, হচ্ছে না।

তোমার বায়োডাটা মিতার কাছে রেখে যেও, দেখি কিছু করা যায় কিনা?

জি, আংকেল। 

তুমি বসো আমি মিতাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

 

বুঝতে পারলাম মিতা পুরোপুরি ওর বাবার মতো হয়েছে। মিতা খুব সেজেগুজে এসেছে, সুন্দর লাগছে।

স্যার আজ পরবো না, গল্প করবো। আজ গল্পের দিন। বাবা নিশ্চই আপনাকে পিৎজা কাহিনী বলেছে, বিশ্বাস করবেন না। বাবা বানিয়ে বানিয়ে কথা বলতে মজা পায়। আমাকে সুন্দর লাগছে না স্যার?

হ্যা,  কিন্তু পরবে না কেন?

ইচ্ছে করছে না, আমার পড়াশোনা করতে ইচ্ছে করে না।

কি ইচ্ছে করে?

স্যার সেটা শুনলে রেগে যাবেন, শোনার দরকার নেই। স্যার এই যে আমি সেজে এসেছি আমাকে দেখে আপনার হার্টবিট কি একটু বেড়ে যায়নি? একটু কেমন কেমন লাগে না?

মনে রেখো আমি তোমার স্যার, ভদ্রভাবে কথা বলো।

সরি স্যার, আমি মাঝে মাঝ খুব সেজেগুজে কলেজে যাই, আমার পরিচিত অনেক ছেলেরই চোখের চাহনি, আচরণ পরিবর্তন হয়ে যায়। এত সুন্দর একটা মেয়েকে দেখলে যাদের চাহনিতে পরিবর্তন আসে না তারা হয় ফেরেশতা অথবা বিরাট ভন্ড।

 এসব কথা বাদ দাও, তুমি না পরলে আমি চলে যাই। 

পালাচ্ছেন স্যার! একটা প্রশ্ন করবো?

কি?

আপনি ভন্ড না ফেরেশতার মতো?

সত্যিটা শুনতে চাও?

জি স্যার, মিতার চোখের চাহনি খুব সরু হয়ে গেছে, খুবই ভয়ংকর লাগছে, বললাম আমি মধ্যবিত্ত।  যাদের কাজ হচ্ছে তার সংসারটা আরো একটু ভালভাবে কিভাবে চলবে সেটা চিন্তা করা। এই সব হাবিজাবি চিন্তা করার সময় আমাদের নাই।

 

স্যার আমার বান্ধবী প্রিয়াকেও আপনার মতো এক মধ্যবিত্ত স্যার পরাতেন।

তারপর?

প্রিয়ার মাকে নিয়ে ভেগে গেছে।

আমি চুপ করে রইলাম, মিতা তার বাবার মতোই। পড়াশুনার বুদ্ধি নেই। কিন্তু স্যাডিস্ট। 

কি চিন্তা করছেন স্যার?

কিছু না।

আপনার বায়োডাটা বাবা আমার কাছে দিতে বলেছে, বাবা আপনার জন্য চাকরী দেখবে।

তোমার বাবার সাথে আজকেই আমার প্রথম দেখা, সে কেন আমাকে চাকরী দিবে?

তার কারণ আমি, আমি বাবাকে বলেছে। বাবার সাথে আপনার বিষয়ে আমার প্রচুর কথা হয়। 

কি কথা?

দুজন স্যাডিস্ট লোক যে সব কথা বলতে পারে সবই হয়। আপনি তো আমাকে স্যাডিস্ট ই ভাবেন তাই না স্যার?

মিতা আমি আজ যাই।  কাল আসবো।  

স্যার  বায়োডাটা আমার মেইলে দিয়ে দিয়েন, বাবা আপনার জন্য চাকরী ঠিক করে রেখেছেন ।

কি বলো?

হ্যা, তাই স্যার। বাবা তার মেয়ের কথা রাখেন। মাকে ঠিক করার জন্য আমার বাবাকে আনার প্রয়োজন ছিলো , আমি একবার বলাতেই বাবা সব ছেড়ে এখানে চলে এসেছেন।

........................... চলবে

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

ছায়াবীথি তলে এসো, উপন্যাস, পর্ব-৩, ইস্তিয়াক আহাম্মেদ

ছায়াবীথি তলে এসো, উপন্যাস, পর্ব-৬, ইস্তিয়াক আহাম্মেদ