ছায়াবীথি তলে এসো, উপন্যাস, পর্ব-৩, ইস্তিয়াক আহাম্মেদ

 ছায়াবীথি তলে এসো

  ইস্তিয়াক আহাম্মেদ 

পর্ব-৩

বাসার ছাদে বসে আছি। ছাদটি খুবই বিপজ্জনক। কোথাও কোথাও রেলিং নেই, শ্যাওলা পরে পিচ্ছিল হয়ে আছে। পা পিছলে পরে গেলে হাত পা ভাঙ্গার সম্ভাবনা আছে। আমি অনেকের অনেক কথার উত্তর দিতে পারি না। বিশেষ করে রিয়া ও মিতার কথার। আচ্ছা ওদের মধ্যে কি কোন মিল আছে? বুঝতে পারছি না, এই সব কেন চিন্তা করছি।

 

নীতু কাদতে কাদতে ছাদে এলো  । দুঃচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে গড়িয়ে পরছে।

জিজ্ঞেস করলাম, কিরে কাদছিস কেন?

আম্মু আজকে আমাকে মেরেই ফেলবে।

কেন ,কি করেছিস?

আমার গলায় একটা স্বর্নের চেইন ছিল পুরো আট আনি, স্কুলে কোথায় যেন পড়ে গেছে। অনেক খুজেছি আর পাইনি।

বাড়ির কাউকে বলেছিস?

না, ভয়ে কাউকে বলি নি।

না বলে ভাল করেছিস। এক কাজ কর দোকানে গিয়ে ঐটার মতো একটা এমিটিশনের একটা চেন কিনে নিয়ে আয় কেউ টের পাবে না। এতোদিনে আমি নিশ্চয়ই একটা ব্যবস্থা করে ফেলতে পারবো।

ওকে ভাইয়া। নীতুর চেহারা থেকে অন্ধকার কেটে গেল। ভাইয়া তোমার তো অনেক বুদ্ধি, কি সহজ একটা সমাধাণ বের করে দিলে।

বুদ্ধি দিয়ে লাভ কি? কোন লাভ আছে , একটা চাকরী পেলাম না এখনও। যাই হোক বাদ দে এসব তোর পড়ালেখা কেমন চলছে?

ভাল, ভাইয়া।

ঠিকমতো পড়ালেখা করিস।

বাবা আমাকে ডেকে পাঠিয়েছে। বাবার সাথে আমার তেমন কোন কথাবার্তা হয়না। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় বাবা আমার সাথে কথা বলতে লজ্জা পায়। বাবা আমার সাথে একটা দূরুত্ব বজায় রেখে চলে। আমাকে সাধারণত ডাকে না।

বাবা ডেকেছো?

বসো।

কি বাবা?

গতরাতে একটা স্বপ্নে দেখলাম, তোমার মা আমার কাছে এসেছে। চোখে কাজল দিয়ে ,পান খেয়ে মুখ লাল করে খুব হাসছে। দেখেই আমার মনটা বেজায় উতলা হয়ে আছে।

ভাল স্বপ্ন দেখোছো ,মন উতলার কি হলো?

তুমি স্বপ্নের কি বুঝবা, এই স্বপ্নে আমার জন্য ভয়ংকর একটা ইঙ্গিত আছে।

কিসের ইঙ্গিত?

এই যে ধরো তোমার মা এত খুশি। সে কেনো এতো খুশি? তার খুশি হওয়ার কারণ কি? আমি এটা নিয়েই ভাবছি? ভাবার পর একটা ব্যাখ্যা দাড় করিয়েছি। তোমার মা খুব শীঘ্রীই প্রিয় মানুষের সাক্ষাত পাবে। আর সে মানুষটা হলো আমি।

কি বলো, বাবা!

হ্যা, আমার মৃত্যুর ইঙ্গিত এ স্বপ্নের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। আমাকে নিতে এসেছে তোমার মা।

খুব কঠিন কিছু কথা মুখ ফসকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। কিন্তু পারছি না। শুধু বললাম “ বাবা তোমার সাক্ষাত পেলে মা কি খুশি হবে?”

বাবা অবাক হয়ে আমার চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলেন। চুপ করে কি যেন ভাবছেন। বাবাকে খুব অসহায় এর মতো লাগছে। এই বৃদ্ধ মানুষটাকে দেখে আমার মায়া লাগা উচিত, কিন্তু লাগছে না। আমার মাকে তিলে তিলে প্রতিনিয়ত কষ্ট দিয়েছেন এই মানুষটা। আমার মায়ের মুখটি যত বার ভেসে ঊঠে এক কান্না ভেজা রমনীর চেহারা দেখি।

বাবা হঠাৎ নিরবতা ভাঙ্গলেন । তোমার চাকরী বাকরির খবর কি?

চেষ্টা করছি বাবা।

আমি তোমার বিয়ের কথা ভাবছি। তোমার কোনো পছন্দ আছে।

না, বাবা।

তোমার কাছে কিছু টাকা হবে? আমার হাত একবারে খালি, কিছু টাকা দরকার।

এবার বুঝলাম বাবা কেনো ডেকেছে। কত লাগবে বাবা?

৫ হাজার টাকা।

রিয়ার দেয়া টাকাটা যেটা দিয়ে অমিতকে মোবাইল কিনে দেয়ার কথা সেটা পকেটে আছে, বাবাকে দিয়ে এলাম। অমিতকে অন্য ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

 

মিতার আম্মু ফোন করলেন, বাসায় যাবার জন্য বললেন।

আমি জানিয়ে দিলাম একটু ব্যস্ত আছি পরে যাবো।

এখন মাঝরাত আমি যখন মাঝরাতে জেগে থাকি অদ্ভুত অদ্ভুত চিন্তা মাথায় ভীর করে। নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়, খুব কাদতে ইচ্ছে হয়। আমার জগৎ টা কেমন যেন এক শূন্যতায় ভরা। মাথার মধ্যে দঃস্বপ্নের পোকারা কিলবিল করে। অনেক অনেক প্রশ্ন মাথায় ভীর করে তার কোন উত্তর নেই।

রিয়া আমাকে এত রাতে কখনোই ফোন দেয় না। হঠাৎ করে রিয়ার ফোন দেখে বেশ অবাকই হলাম।

কি ব্যপার রিয়া, এতো রাতে? কোন সমস্যা?

একটা স্বপ্নে দেখে তোকে ফোন দিলাম।

সবাই শুধু স্বপ্ন দেখে, আমি কি স্বপ্ন বিশারদ। তুই বাবাকে ফোন দিতে পারিস, বাবা কিন্তু স্বপ্ন বিশারদ।

কি যা তা বলছিস?

সত্যিই রিয়া, বাবা তোর স্বপ্নের অর্থ ব্যাখ্যা সহকারে বের করে দিবেন। কিন্তু একটা প্রবলেম আছে।

কি প্রবলেম?

বাবা পৃথিবীর প্রত্যেকটা স্বপ্নের একটাই অর্থ বের করেন, তা হলো মৃত্যু! তুই কি দেখেছিস?

আমি দেখলাম, তোর আর আমার বিয়ে হয়েছে। আমরা হানিমুনে গেছি কক্সবাজার।

বাদ দে রিয়া, স্বপ্নের কথা শুনতে ইচ্ছা করছে না।

তোর শুনতে হবে। কক্সবাজারে যাওয়ার পর তুই আর আমি সাগরে গোসল করতে নেমেছি হঠাৎ একটা বড় ঢেউ তোকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। তারপর আমি চিৎকার দিয়ে জেগে উঠি। তুই আমার সাথে কিছুক্ষণ কথা বল, আমার খুব ভয় লাগছে।

রিয়ার কন্ঠ শুনে বোঝা গেল বেশ ভয় পেয়েছে। দেখ রিয়া এগুলো দঃস্বপ্ন, ভয়ের কিছু নেই।

শুভ শোন, যে ছেলেটার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে ওর নাম সাইফুল ইসলাম। আমেরিকা থেকে চলে এসেছে, আমাদের বাসায় এসে উঠেছে।

ভাল।

লোকটা ভালই, একটু বোকাসোকা। মেয়েরা যেমন হ্যাজবেন্ড খুজে তেমনই। আমার প্রতি কাজে সে মুগ্ধ। আমি বকা দিলেও হাসে, রাগ করলেও হাসে। খুব সহজ সরল মাই ডিয়ার টাইপের।

একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।

কি হলো, শুভ?

মধ্যবিত্তের কষ্ট বুঝতে চাস, মধ্যবিত্তের দীর্ঘশ্বাস না চিনলে কেমনে হবে?

তুই কি বিয়েশাদি করবি না?

চাকরী পেয়ে নেই, তারপর। বউকে খাওয়াবো কি? এমনিতেই একজনের কাধে বসে খাচ্ছি। এখন তো একটা দীর্ঘশ্বাস বিয়ে করলে ডাবল দীর্ঘশ্বাস।

এমনও তো হতে পারে, তোর দীর্ঘশ্বাস টা ভাগ হয়ে তোর কষ্ট একটু কমতে পারে।

হতে পারে, আবার নাও পারে, না হলে?

ফোন কেটে দিলাম।

 কোন মায়া যেন আমাকে স্পর্শ না করে। মায়া ভালবাসা আমার জন্য নয়। কেন জানি মনে হচ্ছে আমি মায়ার ঘোরে বন্দি হয়ে যাচ্ছি। চক্র ভাঙ্গতে হবে , মায়ার চক্র । জগতের কোন মায়া যেন আমাকে স্পর্শ না করে।  মায়ার বৃত্তে বন্দি মানুষ খুব অসহায় খুব দুর্বল। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে।

চাচা আবার চিৎকার করছেন। খুব সম্ভবত চাচীর সাথে আবার ঝরগা লেগেছে। কিছুক্ষণ পর নীতু দরজা ধাক্কা দিবে। রাত বাজে ২ টা । মটকা মেরে পরে থাকতে হবে। কখন যেন ঘুমিয়ে গেলাম।

 

চলবে...........

 

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

ছায়াবীথি তলে এসো, উপন্যাস, পর্ব-৬, ইস্তিয়াক আহাম্মেদ

ছায়াবীথি তলে এসো, উপন্যাস, পর্ব-৫, ইস্তিয়াক আহাম্মেদ