ছায়াবীথি তলে এসো, উপন্যাস, পর্ব-৪, ইস্তিয়াক আহাম্মেদ

 ছায়াবীথি তলে এসো

ইস্তিয়াক আহাম্মেদ 

পর্ব-৪

 

চারিদিকে আধার করে বৃষ্টি নেমেছে । আমি বসে আছি আমার ঘরে জানালার পাশে। বৃষ্টির অনুভূতি একেক মানুষের কাছে একেক রকম। সুখে থাকা মানুষগুলোর কাছে বৃষ্টি ভীষণ আনন্দের । আবার কষ্টে থাকা মানুষগুলোর কাছে বৃষ্টি ভীষণ রকমের শূন্যতা নিয়ে আসে । আমার দাদা বাড়ী ছিল গ্রামে, মাঝে মাঝে যেতাম। সেখানে বৃষ্টির আলাদা অর্থ। টিনের চালায় বৃষ্টির শব্দ এক অন্যরকম অনুভূতি। কিছু বৃষ্টি আছে কৃষকের জন্য ভীষণ রকম হতাশার , অসময়ের বৃষ্টি তাদের ফসল ভাসিয়ে নিয়ে যায়। হয়তো শহরের কোন এক বারান্দায় খুব রূপবতী কোন এক রমনী বৃষ্টির পানিতে হাতের আলতো ছোঁয়ায় শিহরিত হচ্ছে, আবার আরেক কোনে কোন এক কৃষাণী তার স্বামীর অমঙ্গলের কথা চিন্তা করে চোখের পানি ফেলছে। আমার জন্য বৃষ্টি কি নিয়ে আসে সুখ না কষ্ট? বুঝতে পারি না, কেমন যেন বিষন্ন লাগে। রিয়ার কথাই কি ঠিক? আমি কি দিনে দিনে অস্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছি?

কখন যেন অমিত পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে , টের পাইনি।

কিছু বলবি?

হু, ভাইয়া।

ভাইয়া তোমার কি অনেক কষ্ট?

কেন মনে হলো, আমার অনেক কষ্ট?

তুমি খুব আনমনে বাইরে তাকিয়ে ছিল, তোমাকে খুব অসহায় দেখাচ্ছিলো। দেখে মনে হচ্ছিলো তোমার মনের মাঝে খুব কষ্ট।

আমার কষ্ট দূর করতে চাস?

হ্যা, ভাইয়া।

তাহলে ভাল করে পড়াশূনা কর, ভাল একটা রেজাল্ট কর, তখন আমার সব কষ্ট চলে যাবে। অমিত চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।

অমিত তুই কি কিছু বলবি?

ভাইয়া একটা কথা বলবো?

বল।

আজ রিয়া আপু আমাদের কলেজে এসেছিলো।

কেন?

আমাকে খুব দামী একটা মোবাইল কিনে দিয়েছে, আর বলেছে ভাল রেজাল্ট করার জন্য গিফট। আমি নিতে চাইনি জোড় করে দিয়েছে।

আমি চুপ করে রইলাম। কি বলবো বুঝতে পারছি না।

অমিত একটা প্যাকেট আমার দিকে এগিয়ে দিলো, ভাইয়া এটা তোমার জন্য । অমিত চলে গেল।

দামী একটা মোবাইল আর সাথে দুই লাইনের চিঠি “ আমার ভাইয়া টা ভাঙ্গাচোরা মোবাইল ব্যবহার করে ,আমার খুব কষ্ট লাগে। এটা পৃথিবীর সবচে ভাল ভাইয়ার জন্য”।

বৃষ্টির কণার সাথে কখন যেন একফোটা অশ্রু চোখের কোণা দিয়ে গড়িয়ে পড়লো।

মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে । মা তার জীবনে সুখ বিষয়টি কি সেটা জানতেই পারেননি। মাকে খুব কষ্টে থাকতে হয়েছে। মায়ের জীবন শুরু হয়েছিলো কষ্ট দিয়ে, শেষ হয়েছিলো কষ্ট দিয়েই। বাবা কোনদিন মায়ের কষ্ট বুঝতে চাননি। দারিদ্রতা, শারীরিক ,মানুসিক নির্যাতনে মাকে হারিয়ে যেতে হয়েছে আমাদের মধ্যে থেকে। বৃষ্টির কত রুপ , কোন মেয়ে খুব সুখে তার স্বামীর কাধে মাথা রেখে বৃষ্টি দেখছে, আবার অন্য কোথাও কোন মেয়ে তার স্বামীর হাতে নির্যাতিত হচ্ছে।

বৃষ্টি কমে এলো। হঠাৎ করে চারিদিক সুনসান , যেন কবরের নিস্তব্ধতা ।

 নীতু খুব বিপদের মধ্যে আছে। চাচী অগ্নিমুর্তি হয়ে আছেন। নীতুর চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে।

কি হয়েছে চাচী?

কতবড় সাহস আমার সাথে দুই নম্বরী করে।

কি করেছে।

স্বর্ণের চেইন হারিয়েছে, আমি যাতে বুঝতে না পারি একটা এমিটেশন পড়ে আছে। কতবড় ধূর্তবাজ, শয়তান! চিন্তা করা যায়!

চাচী এতে ওর কোন দোষ নেই আমি বলেছিলাম।

কেন? এই খারাপ বুদ্ধি দিলে, সত্য কথা বলতে না দিয়ে কেন আমার সাথে প্রতারণা করালে?

সরি , চাচী ভুল হয়ে গেছে।

দেখো বাপু আমার স্বামীর রোজগাড়ে তোমরা বেঁচে, খেয়ে আছো। আমার সাথেই যদি এমন করো, আমারই যদি ক্ষতি করার চেষ্টা করো সেটা তো আমি সহ্য করবো না।

আমি চুপ করে রইলাম।

নীতু বললো, আম্মু তুমি আমাকে মারো, যা খুশি করো, ভাইয়াকে এইসব কিছু বলবে না।

কেন বলবো না? টাকা পয়সা দিয়ে লেখাপড়া করিয়েছি, পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকার জন্য না। আমার নিজের চলে না, তারউপর বাপ বেটা তিন জন ঘাড়ে চেপে বসে আছে।

চাচী রাগে গজগজ করতে করতে ভেতরে চলে গেল।

নীতু পাশে এসে দাড়ালো, ভাইয়া আমি আম্মুর হয়ে ক্ষমা চাইছি, প্লিজ ক্ষমা করে দাও।

আমি কিছু মনে করিনি।

নীতু কাদছে,  কাঁদুক । অন্যের জন্য কাঁদার মতো লোক পৃথিবী থেকে কমে যাচ্ছে। কেউ আমার জন্য কাঁদছে এটা মনে করার মধ্যেও সুখ আছে। খুব ইচ্ছে করছে রিয়াকে একটু কাঁদিয়ে দেই, রিয়াকে কাঁদলে কেমন দেখায় এটা দেখতে খুব ইচ্ছে করছে । সাইফুল ইসলামের সাথে রিয়ার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ও আমেরিকায় চলে যাবে। রিয়ার মতো মেয়ের খুব ভাল জায়গায় বিয়ে হবার অধিকার আছে। কেন শুধু শুধু একটা মেয়ে রাজপ্রসাদ ছেড়ে মধ্যবিত্তের দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে যাবে? রিয়া একবার আমাকে বাসায় বলেছিলো, যখন খুব বৃষ্ট হবে, ঝুম বৃষ্টি তখন শুধু একটিবারের জন্য আমার হাত ধরে রাস্তায় হাটবি?

আমি বলেছিলাম, ঝুম বৃষ্টিতে কার হাত ধরে রাস্তায় ঘুরার জন্য আমার জন্ম হয়নি।

ভন্ডামি ছাড়, তুই দুঃখ বিলাসী আর কিছু না । পৃথিবীর কিছু মানুষ আছে যাদের দেখলে মনে তাদের জীবনে দুঃখ ছাড়া আর কিছু নেই। এরা হয় মিনমিনে স্বভাবের , মনে হয় এরা ভাজা মাছটা উলটে খেতে জানেনা। কিন্তু এরাই আবার ভয়াবহ সব কান্ড করে বসে থাকে। আর শোন , তুই আমার সাথে দুঃখ দুঃখ খেলাটা খেলবি না, এটা তোর একটা খেলা। যাতে করে তোর অসহায় মুখ দেখে আমি তোর প্রেমে পরে যাই। আমি রিয়ার দিকে তাকিয়ে শুধু হাসছিলাম।

রিয়ার কথা চিন্তা করতে করতে চোখ বন্ধ হয়ে এলো।

মিতা ফোন করেছে, ওর মায়ের সাথে ওর খেলাটা বন্ধ হয়েছে। ওকে পড়াতে যেতে হবে।

 

............

চলবে

  


 

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

ছায়াবীথি তলে এসো, উপন্যাস, পর্ব-৩, ইস্তিয়াক আহাম্মেদ

ছায়াবীথি তলে এসো, উপন্যাস, পর্ব-৬, ইস্তিয়াক আহাম্মেদ

ছায়াবীথি তলে এসো, উপন্যাস, পর্ব-৫, ইস্তিয়াক আহাম্মেদ